December 3, 2024, 5:53 pm
মো: মেহেদী হাসান, গৌরনদী ॥ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ছুটিতে নিজবাড়িতে এসেছিলেন জেলার গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত আধুনা গ্রামের মৃত এয়াছিন বয়াতীর ছেলে আরজ আলী বয়াতী। ছুটিতে থাকাকালীন অবস্থায় দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়াদিয়ে দেশ মাতৃকার টানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন আরজ আলী। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। ছিলেন সম্মুখ সারির একজন বীরযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তান সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি (আরজ আলী বয়াতী) শহীদ হয়েছেন।
আরজ আলীর সহযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও একজন প্রকৃত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও আরজ আলীর স্বীকৃতি মেলেনি। যা আমাদের জন্য চরম লজ্জার। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলী বয়াতীর দিনমজুর ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা আরজ আলী বয়াতী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার সময় আমার বাবা আরজ আলী ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদিয়ে দেশ মাতৃকার টানে তিনি (বাবা) আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সাথে দেশ রক্ষায় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আমার বাবা আরজ আলী শহীদ হয়েছেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলী বয়াতীর পরিবারকে এক হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তার কার্যালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীণ একান্ত সহকারী সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্বাক্ষরিত একটি অনুদানের চেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলীর স্ত্রী লালমোন নেছার নামে পাঠিয়ে ছিলেন। নজরুল ইসলাম বলেন, আমার মা জীবিত থাকাকালীণ আমার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। ২০১০ সালে আমার মা মৃত্যুবরন করেন।
বাবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের কাগজপত্র মায়ের কাছে গচ্ছিত ছিলো। যা এতোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এজন্য গেজেটভুক্তের আবেদন করতে পারিনি। অতিসম্প্রতি কয়েকটি কাগজ আমার চাচার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরজ আলী বয়াতীর নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। বাটাজোর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল কাদেরসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আরজ আলী আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন।
তার সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় যুদ্ধে আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাটাজোর স্কুলের পাশে পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধা আরজ আলী শহীদ হয়েছিলেন। আমরা এতোদিন জানতাম আরজ আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন তার সন্তানরা এসে বলছে তার (আরজ আলী) নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলীর নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেলে গেজেটভুক্তের জন্য সুপারিশ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
Leave a Reply